এলকপ মাসিক বুলেটিন (৩য় বর্ষ ১ম ও ২য় সংখ্যা)
সম্পাদকীয়
গত ২৯শে ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক অগ্নিকান্ডে আহত এবং নিহতের ঘটনায় এলকপ শোকাভিভূত। সৃষ্টিকর্তার নিকট আমরা তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং তাদের পরিবারের প্রতি জানাই আমাদের গভীর সমবেদনা। রাষ্ট্রের দায়িত্বের অবহেলা অবশ্যই এই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তবে এর ফলে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ কিছুটা হলেও সক্রিয় হয়েছে। তাদের এই সক্রিয়তা কি শুধুই মন ভুলানো? কেনইবা তাদের সক্রিয়তা ৪৬টি তাজা প্রাণের ঝরে যাওয়ার ফসল? কর্তৃপক্ষের অভিযানে অনেকগুলো স্থাপনা ইতোমধ্যে সিলগালা করা হয়েছে। কিন্তু কেনইবা এতোদিন ধরে এই স্থাপনাগুলো রাজধানী জুড়ে তার অস্তিত্ব রক্ষা করতে পেড়েছে? অভিযানের পাশাপাশি যেসকল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের গাফিলতির কারণে এই স্থাপনাগুলো এতোদিন যাবত তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে, তাদেরকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে, সমগ্র জাতির সাথে এটাই এলকপের দাবি। এবারের বুলেটিনে একটি প্রবন্ধে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার উপর আলোকপাত করা হয়েছে।
এবার এলকপ মাসিক বুলেটিনের দুটি সংখ্যা একত্রে প্রকাশিত হল। ফলে স্বাভাবিকভাবে এবারের সংখ্যার কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে প্রবন্ধ নিবন্ধ ছাপা হয়েছে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বাংলাদেশের চিরাচরিত সমস্যাগুলোর একটি। সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে কথা হচ্ছে। সেজন্য ভোক্তাদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। বাংলাদেশে ভোক্তা অধিকারের পথিকৃৎ অধ্যাপক মিজানুর রহমানের সাক্ষাৎকার এবারের বুলেটিনকে নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা দেবে। এছাড়া ৩য় বর্ষ ১ম সংখ্যায় আরও রয়েছে মিয়ানমারের উপরে দুটি প্রবন্ধ। প্রথম প্রবন্ধে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কীভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে সেটি ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রবন্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত বার্মা আইনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে এর প্রভাব বোঝা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। এছাড়া শ্রম অধিকার ও নারী অধিকার নিয়ে দুটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে।
দ্বিতীয় সংখ্যায় আমরা ভাষা সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ওপর মনোনিবেশ করেছি। এই সংখ্যার অধিকাংশ লেখাই ভাষা সংক্রান্ত। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সংঘটিত ভাষা আন্দোলন সারা দুনিয়ায় একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। এই ঘটনাই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি রচনা করেছিলো। তবে বাংলাদেশ কেবল বাঙালির নয়, অন্যান্য ভাষার মানুষেরও দেশ। সেসব ভাষার বৈচিত্র্য বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক তার সাক্ষাৎকারে এই বিষয়টির ওপরে জোর দিয়েছেন। এছাড়া একটি প্রবন্ধে ব্যক্তি, অভিব্যক্তি ও অধিকারের সম্পর্ক খোঁজা হয়েছে। নিজের ভাষায় মতামত প্রকাশের অধিকার ছাড়া মানুষ ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে না। তবে অধিকার অসীম নয়। কিছু যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ মানতে হয়। কিন্তু সব বাধানিষেধ যুক্তিসঙ্গত কিনা এই প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
অন্য একটি প্রবন্ধে আদালতে ভাষা ও রাষ্ট্রভাষার দ্বৈরথ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মাতৃভাষায় আদালতের রায় লেখা না হলে নাগরিকের ন্যায়বিচার পাবার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগের একটি রায়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রভাষার সঙ্গে আদালতের ভাষার একটি কৃত্রিম বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। তবে অনেক বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাংলা ভাষায় রায় দিচ্ছেন। ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের নিশ্চয়ই এর মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা গেছে। এছাড়া মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব ও বাংলা ভাষা চর্চার প্রতি যত্নশীলতা বিষয়ক দুটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ভাষার বাইরে এই সংখ্যায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এতে গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সত্যিকারভাবে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের মধ্যে পড়ে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।
এবারের বুলেটিনে লেখকদের লেখা পাঠাবার আহ্বান জানানো হয়েছে। আমাদের সকল পাঠক আমাদের সম্ভাব্য লেখক। আশা করি, এবারের বুলেটিন আমাদের পাঠক ও লেখকদেরকে নতুন চিন্তা ও নতুন লেখায় উদ্বুদ্ধ করবে।
[dflip id=”15412″ type=”thumb”][/dflip]
Leave a Reply