এলকপ মাসিক বুলেটিন (৩য় বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা)
সম্পাদকীয়
এলকপ মাসিক বুলেটিনের ৩য় বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে। এবারে বেশ কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘লালন ফকিরের গানে মানবাধিকার’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ। এই লেখায় লালন ফকিরের গানে জাতপাত বিরোধী অবস্থানকে তুলে ধরা হয়েছে। জাতপাত বিরোধিতা করার অর্থ মানবিক মর্যাদা ও সাম্যের পক্ষে দাঁড়ানো, যা কিনা মানবাধিকারের ভিত্তি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রেও ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারে’র অঙ্গীকার করা হয়েছে। জন্মগত কারণে কাউকে ছোট করা, হেয় করা মানবতার অপমান। জন্ম মানুষের মর্যাদা নির্ধারণ করতে পারে না, কর্মই কেবল মানুষের মর্যাদা নির্ধারণের ভিত্তি হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ায় জাতপাত ছিল অসাম্যের একটি ধরন মাত্র একমাত্র নয়। নারীপুরুষের অসাম্যও এর মধ্যে পড়বে।
বিভেদ অসাম্যের জন্ম দেয়। লালন ফকির চিহ্নের মাধ্যমে তৈরি বিভেদের বিপক্ষে ছিলেন। যেহেতু লালন ফকির মনে করতেন আল্লাহ চিহ্নের অতীত— ‘অনামক অচিনা’, সেহেতু তাঁকে চিহ্নে ধরা যায় না। তিনি চিহ্নের ঊর্ধ্বে উঠে অধরা অচিন মানুষকে মনের মানুষ হিসেবে ধারণ করেছেন। এই মনের মানুষ সকল মানুষের মধ্যে বিরাজ করে। সেজন্য সকল মানুষ তাঁর কাছে মর্যাদাবান। তিনি গেয়েছেন— ‘সুন্নত দিলে হয় মুসলমান / নারীলোকের কি হয় বিধান। / বামন চিনি পৈতে প্রমাণ/ বামনী চিনি কি করে।।’ ফরাসি ভাষাবিজ্ঞানী ফার্দিনান্দ দ্য সসুর বলেন, মানুষের ভাষা চিহ্নের সমষ্টি। সমস্যা হল- ভাষা ও ভাষায় ধারণকৃত চিন্তা চিহ্নের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। সেজন্য লালন ফকির সকল চিহ্নকে বাদ দিয়েছেন এমন বলা যাবে না। সেটি তো সম্ভব নয়। যেমন— ‘আল্লাহ’ চিহ্নকে তিনি গ্রহণ করেছেন। যেহেতু সকল মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি, সেহেতু সকল মানুষই তার সাপেক্ষে সমান। তবে লালন ফকির নিজেকে কেবল আল্লাহর বান্দা হিসেবে নয়, তাঁর প্রেমাস্পদ হিসেবে নিজেকে ভেবেছেন।
লালন ফকিরের মানবাধিকার দর্শন ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। এগুলো হলো- বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্ক, জাতীয় আইনগত সহায়তার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন, টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই বিতর্ক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার। এছাড়া সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ে ইনফোগ্রাফিক্স প্রকাশিত হলো। সম্প্রতি ভুটানের রাজা বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। প্রতিবেশী এই দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন যেকোন সময়ের চাইতে ভাল অবস্থায় রয়েছে। এবারের সফরে উভয় দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ‘ভুটানের রাজার সাম্প্রতিক সফর: সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ- ভুটান সম্পর্ক’ প্রবন্ধে এই দিকটি তুলে ধরা হয়েছে।
‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনের পর্যালোচনা” নিবন্ধে ২০১৩ সালে প্রণীত ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনে’ প্রদত্ত অধিকার নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এরপর ‘স্মার্ট লিগ্যাল এইড, স্মার্ট দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২৮শে এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালিত হয়। এই দিবসের কথা মাথায় রেখে ‘নারীর ক্ষমতায়নে জাতীয় আইনগত সহায়তার ভূমিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধটি প্রকাশিত হলো।
সম্প্রতি ভারত টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিজেদের নামে নিবন্ধিত করেছে। কিন্তু কে না জানে এই শাড়ি বাংলাদেশের ঐতিহ্য। সেজন্য ‘টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই যে কারণে বাংলাদেশের প্রাপ্য’ শিরোনামের একটি লেখা ছাপা হলো। এছাড়া ইনফোগ্রাফিক্সে বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি, বুলেটিনের এবারের সংখ্যাটি পাঠকদের চিন্তার খোরাক যোগাবে।
[dflip id=”15422″ type=”thumb”][/dflip]
Leave a Reply