এলকপ মাসিক বুলেটিন (২য় বর্ষ ২য় সংখ্যা)

এলকপ মাসিক বুলেটিন (২য় বর্ষ ২য় সংখ্যা)

সম্পাদকীয়

ভাষার মাস দুয়ারে। এবার বায়ান্নর একাত্তর বছর পূর্তি হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি আসলেই আমরা ভাষার কথা ভাবি, ভাষার কথা বলি। এই ভাবনা জুড়ে থাকে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কিভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ এবং এরই ধারাবাহিকতায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম। এলকপ মাসিক বুলেটিনের এবারের এই ভাষা সংখ্যায় ‘ভাষা ও আত্ম-নিয়ন্ত্রণ অধিকার’ শীর্ষক নিবন্ধে এই চিন্তাকে গুছিয়ে প্রকাশের চেষ্টা করা হয়েছে।

বাংলা ভাষা বাঙালির পরিচয়ের প্রধান ভিত্তি। এর সাথে ধর্মের বিরোধ নেই। একজন বাঙালি হিন্দু যখন দেবী স্বরস্বতীর কাছে বর চান তিনি বাংলাতেই চান। অন্যদিকে, বাঙালি মুসলমান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন বাংলাতেই। নিজের ভাষায় খোদার সাথে সংযোগ স্থাপনের চেয়ে সহজ ও সরাসরি আর কোন মাধ্যম নেই। আরবি-ফারসি-সংস্কৃত ধ্রুপদি ভাষা। এসব ভাষার উপাদান বাংলাকে সমৃদ্ধ করে। ইংরেজি ও অন্যান্য ইউরোপিয় ভাষার উপাদানও বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছে। সমৃদ্ধির নামে পরনির্ভরশীলতা যেন আমাদেরকে জেঁকে না বসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা যদি আমরা অনুসরণ করি তবে পরাধীনতার গ্লানি আমাদেরকে আর কখনোই স্পর্শ করতে পারবে না। এ সম্পর্কে ‘বাংলা ভাষার উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান’ শীর্ষক নিবন্ধটি আমাদেরকে নতুন করে ভাবাবে। এছাড়া এ সংখ্যার আরেকটি নিবন্ধ হল ‘ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ: বাঙালিত্বের নতুন সংজ্ঞা নির্মাণ’। এই সময়টাই বঙ্গবন্ধু বাঙালিদেরকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, নিয়ে গেছেন স্বাধীনতার দিকে।

বাংলা ভাষা যথেষ্ট পুরোনো ভাষা। কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশ রাষ্ট্র অনেক নবীন। অন্যদিকে, বাংলার প্রায় সমবয়সী হলেও ইংরেজি ভাষা অনেকদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। সেজন্য এই ভাষাটির দ্রুত বিকাশ ঘটেছে। ছোট্ট একটি দ্বীপের ভাষা থেকে এই ভাষাটি এক সময় হয়ে ওঠে সাম্রাজ্যের ভাষা- যে সাম্রাজ্যে সূর্য কখনো অস্ত যেত না! ভূখণ্ড দখল করে সাম্রাজ্য গড়ার যুগ শেষ হলেও মন-মগজ দখলের যুগ শেষ হয়নি। বর্তমান সময়ে ভাষা ও সংস্কৃতিকে দখলের মাধ্যমে মন ও মগজ দখল করা হয়। এ প্রসঙ্গটি মাথায় রেখে ‘আন্তর্জাতিক আইনে জাতিগত সংখ্যালঘুদের ভাষিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার’, ‘ভাষার অধিকার, অধিকারের ভাষা”, “আইন, ভাষা ও জেন্ডার’ এবং ‘বাংলা ভাষায় বিচারকার্য পরিচালনা: একটি সাংবিধানিক অধিকার’ শীর্ষক চারটি নিবন্ধ ছাপা হল।

উচ্চশিক্ষা মানে অন্ততপক্ষে দুটি বিদেশি ভাষা রপ্ত করা। ভিন্ন ভাষা শিক্ষা শুধু ভিন্ন সংস্কৃতি ও চিন্তাকে বুঝতে সাহায্য করে না, তা আমাদের মস্তিষ্ককেও শাণিত করে। তবে মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে নয়, আত্মসম্মানকে বিসর্জন দিয়ে নয়। একে কেন্দ্রে রেখেই। অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান উচ্চশিক্ষায় বাংলার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। সেজন্য স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বাংলায় ভাষায় আইনের বই লিখেছেন। তাঁর বিখ্যাত বই “পরিবর্তনশীল বিশ্বে আন্তর্জাতিক আইনে’র রিভিয়্যু প্রকাশ করা হল। এছাড়া প্রকাশিত হল ‘বাংলাদেশে মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ। সবশেষে রয়েছে ‘ফেইক নিউজ: এ থ্রেট টু হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রেসি’ (ফেক নিউজ: মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি) শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারের উপর একটি প্রতিবেদন।
বাংলা ভাষায় চিন্তাচর্চা বেগবান হোক। পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্যান্য ভাষারও বিকাশ ঘটুক। চলুন সবাই একসাথে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিই।

[dflip id=”15374″ type=”thumb”][/dflip]

পিডিএফটি পড়তে ক্লিক করুন


পিডিএফটি ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *