এলকপ মাসিক বুলেটিন (২য় বর্ষ ১০ম সংখ্যা)
সম্পাদকীয়
কবি আবুল হাসান লিখেছেন, “মৃত্যু আমাকে নেবে, জাতিসংঘ আমাকে নেবেনা’। ফিলিস্তিনের মানুষ এমন কথা বলতেই পারেন, রোহিঙ্গারাও বলতে পারেন। আবুল হাসান আরও লিখেছেন, ‘সুধীবৃন্দ ক্ষান্ত হোন, গোলাপ ফুলের মতো শান্ত হোন/ কী লাভ যুদ্ধ কোরে? শত্রুতায় কী লাভ বলুন?/ আধিপত্যে এত লোভ? পত্রিকা তো কেবলি আপনাদের/ ক্ষয়ক্ষতি, ধ্বংস আর বিনাশের সংবাদে ভরপুর’। আবুল হাসানের ‘জন্ম মৃত্যু জীবনযাপন’ কবিতাটি পুরো তুলে দিয়েই এই সম্পাদকীয় শেষ করা যেত! কিন্তু আমাদের আরও কিছু কথা আছে। কবিতার ভাবসম্প্রসারণ লেখবার দরকার আছে।
গাজায় যুদ্ধ হচ্ছে। যুদ্ধ হচ্ছে ইউক্রেনে। মানুষ শান্তি চায়, মানুষ বাঁচতে চায়, মানুষ অধিকার চায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের উপর নির্মিত হয় জাতিসংঘ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তৈরি হওয়া লীগ অব ন্যাশনস (জাতিপুঞ্জ) কার্যকর হয়নি। তবে জাতিসংঘ এখন পর্যন্ত টিকে আছে। টিকে থাকাই শেষ কথা নয়। জাতিসংঘ পশ্চিম গোলার্ধে যুদ্ধ এড়াতে অনেকাংশে সফল হতে পেরেছে। কিন্তু পৃথিবীর অন্য প্রান্তে যুদ্ধ লেগে ছিল। গত শতকে ভিয়েতনামে অন্যায় যুদ্ধ, কিংবা এই শতকে আফগানিস্তান ও ইরাকে অন্যায় যুদ্ধ থামাতে পারেনি। তবে তৃতীয় বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার শিরোনাম থেকেই বোঝা যায়, জাতিসংঘ মনে করে মানবাধিকার সার্বজনীন। তাই এর প্রয়োগও সার্বজনীন হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে মানবাধিকারের সার্বজনীন প্রয়োগ দেখা যায় না। জাতিসংঘও সব মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সমানভাবে উচ্চকিত নয়। ২৮শে অক্টোবর ২০২৩ তারিখের বিভিন্ন ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষ তদন্ত না করে বিবৃতি দেওয়ায় জাতিসংঘ নিরপেক্ষতা হারিয়েছে বলে আমাদের এবারের বুলেটিনের দ্বিতীয় প্রবন্ধে যুক্তিতর্ক তুলে ধরা হয়েছে। তবে আমরা জাতিসংঘকে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীলের দেশের শেষ ভরসাস্থল হিসেবে বিবেচনা করতে চাই।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজার জাতিসংঘ স্কুল, হাসপাতাল ও এ্যাম্বুলেন্সে নিরীহ নাগরিকদের উপর নির্বিচার ইজরায়েলি হামলার করায় নিন্দা করেছেন। ফলশ্রুতিতে তাকে ইজরায়েলের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনকে কেন্দ্র করে যে সফর গিয়েছিলেন সেখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বিশ্ব অর্থব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে আহবান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে এবারের বুলেটিনের একটি প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। পরবর্তী প্রবন্ধে বর্তমান সরকারের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিল অনুস্বাক্ষর করা এবং মানবাধিকারের প্রতি তাদের অঙ্গীকারকে তুলে ধরা হয়েছে। এরপরের প্রবন্ধে ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতি পশ্চিমাদের বিমাতাসুলভ আচরণ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। নির্বাচন দুয়ারে কাড়া নাড়ছে। নির্বাচন নিয়ে তরুণদের প্রত্যাশা সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে এবারের বুলেটিনের এক প্রবন্ধে।
এলকপ অনেক বছর ধরে মানবাধিকার সামার স্কুলকে সামনে রেখে ইয়ারবুক প্রকাশ করে আসছে। এ বছর প্রথমবারের মত এলকপ জার্নাল অব হিউম্যান রাইটস প্রকাশিত হলো। এই জার্নালের দুটি গবেষণাপত্রের দুটি রিভিয়্যু প্রকাশিত হলো। প্রথমটি অধ্যাপক মিজানুর রহমানের ‘বিউপনিবেশায়িত সমাজে আইন অধ্যায়নের পন্থা’ শীর্ষক প্রবন্ধের রিভিয়্যু এবং অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্ৰ মণ্ডলের ‘আন্তর্জাতিক আইনে সংখ্যালঘু অধিকারের স্বীকৃতি’ শীর্ষক প্রবন্ধের রিভিয়্যু। সবশেষে থাকছে মানবাধিকার সামার স্কুল নিয়ে একটি প্রতিবেদন এবং সামার স্কুলে অংশগ্রহণকারী এক শিক্ষার্থীর অভিব্যক্তি। মানবাধিকার সামার স্কুলের প্রফেসর ডাম্বলডোর অর্থাৎ অধ্যাপক মিজানুর রহমানের একটি বক্তৃতার বাংলা অনুবাদের শেষ কিস্তি প্রকাশিত হয়েছে। এই বক্তৃতায় অধ্যাপক রহমানের সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার চিন্তা খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। মানবাধিকার সামার স্কুল গড়ে ওঠার পেছনের দর্শন এবং এমন কি সামার স্কুলের কথাও প্রসঙ্গক্রমে এসেছে।
পাঠক, আমরা আশা করি যুদ্ধ কেটে যাবে, শান্তি ফিরে আসবে। সাধারণ মানুষ সুখে থাকবে। আমরা বলতে চাই— আমরা সবাই ভালো আছি, খুব ভালো আছি। পাঠক, এলকপ মাসিক বুলেটিনের এবারের সংখ্যা পড়ে কেমন লাগলো? আমরা আপনাদের পাঠ-সমালোচনা প্রকাশ করতে আগ্রহী। আমাদের ঠিকানায় অনুগ্রহ করে আপনাদের অভিব্যক্তি লিখে পাঠান।
[dflip id=”15402″ type=”thumb”][/dflip]
Leave a Reply