এলকপ মাসিক বুলেটিন (২য় বর্ষ ৭ম সংখ্যা)

এলকপ মাসিক বুলেটিন (২য় বর্ষ ৭ম সংখ্যা)

এলকপ মাসিক বুলেটিন (২য় বর্ষ ৭ম সংখ্যা)

সম্পাদকীয়

নির্বাচন দুয়ারে কাড়া নাড়ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নির্বাচন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে মাথায় রেখে এবারের সংখ্যা থেকে নির্বাচনকে প্রাধান্য দিয়ে প্রবন্ধ প্রকাশিত হবে।
অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের ইংরেজিতে প্রদত্ত বক্তৃতার বাংলা তর্জমা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছিল। নির্বাচন এবারের প্রধান প্রতিপাদ্য হলেও এবারের সংখ্যায়ও এই অভিভাষণের পরের কিছু অংশ প্রকাশিত হলো। অধ্যাপক রহমানের দার্শনিকতায় ঋদ্ধ বক্তৃতা আইন পাঠ, তত্ত্বায়ন ও চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
‘মুক্তিযুদ্ধ, মানবাধিকার ও ভূ-রাজনীতি’ বিভাগে তিনটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হলো। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এক দারুণ বিদগ্ধ আলোচনা প্রকাশ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। “বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পূর্বাপর: ন্যায়বিচারের স্বরূপ সন্ধান’ প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ বঙ্গবন্ধুর আইনি উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে আলাপ করতে যেয়ে লিখেছেন, বায়াফ্রা, রোডেশিয়া, কাতালোনিয়ার অধিবাসীরা আত্মনিয়ন্ত্ৰণ অধিকারের দাবি তুলে সংগ্রাম করলেও বাংলাদেশ প্রথম সফলভাবে এই অধিকার অর্জন করে। কারণ বাংলাদেশ পেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য নেতৃত্ব যা অন্যরা পায়নি। কিন্তু এই মহান নেতাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর নির্মম ইনডেমনিটি আইন পাশ করা হয়। অর্থাৎ শেখ হাসিনা তার পিতার হত্যার বিচার চাইতে পারেননি। বিচার পেতে তাকে দীর্ঘ চার দশক লড়তে হয়েছে। কানাডার মত দেশের বহিঃসমর্পণ আইনের জটিলতায় আইনের শাসন মেনে হওয়া বিচারের রায়ও পুরোপুরি কার্যকর করা যাচ্ছে না।
এ বিভাগের বাকি দুটো লেখায় নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গ এসেছে। ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: একটি প্রাক বিশ্লেষণে’ বাংলাদেশের নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গ এসেছে। বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের ইতিহাস এবং বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচন’ শিরোনামের পরের লেখায় মূলত থাকছে বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিষয়।
এর পরের বিভাগ ‘দেশে-বিদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি’। এ বিভাগেও তিনটি প্রবন্ধ থাকছে। প্রথম লেখায় সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হলো। ইংরেজিতে একটি কথা আছে- উইনার টেকস অল। অর্থাৎ বিজয়ী সব নিয়ে নেয়। বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে গত শতকের নব্বইয়ের দশক ও এই শতকের শূন্য দশকে অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে বাংলাদেশে
ধারাবাহিকভাবে বিজয়ী দল সব না হলেও দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়েছে। এর ফলে তারা নিজেদের মত করে। সংবিধান সংশোধন করেছে। বিরোধী দলের ভোটের সংখ্যা বেশ অর্থাৎ যথেষ্ট জনসমর্থন ছিল। কিন্তু তাদের মতামতের তোয়াক্কা না করে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। ফলত বারবার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়েছে।
এবারের সংখ্যায় বাংলাদেশের নির্বাচনে নারীদের সরাসরি প্রতিনিধিত্বের ধারাবাহিক অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে যেখানে কোন নারীই সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতে পারেননি, সেখানে প্রায় পয়তাল্লিশ বছর পর ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সরাসরি ভোটে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বাইশ জন। সরাসরি নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণও বেড়েছে বেশ। প্রথম নির্বাচনে দুজন নারী সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, যা সর্বশেষ নির্বাচনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে আটষট্টি জনে। পাশাপাশি ১৯৭৩ সালে যেখানে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ছিল পনেরোটি, সেটি এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে পঞ্চাশে। অন্য আরেকটি প্রবন্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি নিয়ে। একটি প্রবন্ধ থাকছে। সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন একটি রাষ্ট্রকে মজবুত ভিত্তির উপরে দাঁড় করায়। নির্বাচনকে সুষ্ঠ করতে গেলে নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে চলতে হয়। এছাড়া মেনে চলা হচ্ছে কিনা সেটি কঠোরভাবে তদারকি করতে হয়। নিরপেক্ষ নির্বাচন মানে বিভিন্ন পক্ষকে পয়সা ও পেশীশক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ দেওয়া নয়। বরং নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে টাকার খেলা ও জবরদখলের অবসান ঘটানো। এটি ব্যতীত নির্বাচনী ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠ করা যাবে না। এ বিভাগের সর্বশেষ প্রবন্ধে ভোটাধিকারের সঙ্গে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের সম্পর্ক বিচার।
এবারের সংখ্যা থেকে আর কোন মুভি রিভিয়্যু প্রকাশিত হবে না। তবে ‘কেইস রিভিয়্যু’ এবং ‘বুক রিভিয়্যু” প্রকাশিত হতে থাকবে। এবারে নির্বাচন ও মানবাধিকার সংক্রান্ত একটি মামলার পর্যালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। এই মামলায় নির্বাচনী ট্রাইবুনালের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। এই পর্যালোচনা এবারের সংখ্যায় প্রকাশিত ‘নির্বাচনী ট্রাইবুনালের এখতিয়ার’ শীর্ষক প্রবন্ধটির সম্পূরক হিসেবে পাঠ করা যায়। ‘বুক রিভিয়্যু’ বিভাগে নির্বাচন নিয়ে কিভাবে গবেষণা করতে হয় সে সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের পাঠ-পর্যালোচনা প্রকাশিত
হয়েছে।
আমাদের প্রত্যাশা এবারের সংখ্যাটি পাঠকদের জিজ্ঞাসু মনের খোরাক যোগাবে। আমরা এলকপ মাসিক বুলেটিনের পাঠকদের পাঠোত্তর পর্যালোচনা প্রত্যাশা করি। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় বর্ণিত ঠিকানায় আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য পাঠাতে পারেন।

[dflip id=”15387″ type=”thumb”][/dflip]

পিডিএফটি পড়তে ক্লিক করুন


পিডিএফটি ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *